লাইফস্টাইলে পরিবর্তন এনে জীবনে স্থায়ী একটি পরিবর্তন আনার ফুরসত কোথায় আমাদের? যাঁরা চিকিৎসা করেন, তাঁরাও ওষুধকেই বেশি গুরুত্ব দেন। তাই ওষুধ যারা প্রস্তুত করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চিকিৎসককে সে বিষয়ে নানাভাবে প্রণোদিত করার জন্য ব্যস্ত। বস্তুত, এটা এখন বিজনেস স্টাইল। চিকিৎসক ও রোগী দুই পক্ষই মনে করে, কেবল ওষুধ গ্রহণ সহজ উপায়, কষ্ট করে নিজের জীবনযাপনে অদলবদল করা কেন?
আমাদের দেশে কী পরিসংখ্যান আছে জানি না। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোলের মতে, যেকোনো মাসেই ৪৮ শতাংশ আমেরিকান ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে কোনো না কোনো ওষুধ গ্রহণ করে এবং এই শতকরা ভাগটি গত দশকে বেশ বেড়েছে।
বস্তুত, আমেরিকানরা ২০০৮ সালে ব্যবস্থাপত্র ওষুধের পেছনে ব্যয় করেছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। আপাতদৃষ্টে মনে হয়, তারা মনে করে, সব রোগের নিরাময় হলো ওষুধ।
অবাক কথা।
ক্রনিক রোগ বলে যেসব রোগকে জানি, যেমন ডায়াবেটিস, হূদেরাগ, ক্যানসার—এগুলোকে আজকাল বলা হচ্ছে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’। আজকাল অনেকেই জানেন, খাদ্যবিধি ত্রুটিপূর্ণ হলে, শরীরচর্চার অভ্যাস না থাকলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, দুই কোটি ৫০ লাখের বেশি আমেরিকানের রয়েছে ডায়াবেটিস। আমাদের দেশে একটি আনুমানিক পরিসংখ্যান আছে, ৬০ লাখের বেশি লোকের ডায়াবেটিস। অবশ্য তথ্যটি মূলত হাসপাতালে রেজিস্ট্রি করা লোকের গণনা থেকে প্রাপ্ত।
ডায়াবেটিক সমিতি দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৫ শতাংশকে তাদের আওতায় আনতে পেরেছে। যাই হোক, চিহ্নিত হলেও চিকিৎসা করে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময় করা গেছে? রোগ মোকাবিলার জন্য ব্যক্তিবিশেষে দেওয়া হয়েছে ওষুধ। শরীরে ইনসুলিনের উৎসব বাড়ানোর জন্য বা শরীরকে ইনসুলিনের প্রতি অধিক সংবেদনশীল হওয়ার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। রোগীদের অবশ্য খাদ্যবিধি ও ব্যায়ামের কথাও বলা হয়, তবে সেগুলো যেন ওষুধের চেয়ে গৌণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
স্বাস্থ্যের কথা যখন আসে, তখন এর কোনো দ্রুত চিকিৎসা বা নিরাময় নেই
স্বাস্থ্য বা সুস্বাস্থ্য যা-ই বলি, একে আমরা যেভাবে দেখি বা ভাবি, সে বিষয়ে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। অবিলম্বে ওষুধ খেলাম আর তৎক্ষণাৎ সমাধানও আশা করলাম—এমন ধারণা বোধহয় ঠিক নয়।
সমস্যার অন্তিম সমাধানও এটি নয়। রোগীকে তার সার্বিক লাইফস্টাইল দেখতে হবে এবং সমস্যা নিজে সমাধানের জন্য যেসব অদলবদল প্রয়োজন, জীবনযাপনে সে রকম পরিবর্তনও আনতে হবে।
ওষুধ নেওয়ার আগে লাইফস্টাইলে তেমন পরিবর্তন এনে দেখলে ক্ষতি কী?
খাদ্যবিধি, শরীরচর্চা—এমন একটু রৌদ্রালোকে অবগাহনের মতো জীবনচর্চাও কম নয়। তাই কোনো দ্রুত নিরাময় নয়। ওষুধ খেলাম আর জীবনযাপন আগের মতো রাখলাম, তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না; আরও বড় সমস্যা হবে। কারও হয়তো ট্রিপল বাইপাস হয়েছে, কিন্তু তিনি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন না করায় আরেকটি সার্জারির মুখোমুখি হবেন। তাই ভাবনার পরিবর্তন চাই।
No comments:
Post a Comment